শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ, ১৪৩১
অনলাইন ডেস্ক।।
২০২১ সালের জুন মাসে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কাঁদাহারে ইয়াবালী মণ্ডল, তার ছেলে ফেরদৌস মণ্ডলসহ ৫৯ জন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পান। পরে প্রকল্পটিতে তারা মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এজন্য কমিটি গঠন করা হয়। কোষাধ্যক্ষ হন ফেরদৌস। মসজিদের নামে সরকারিভাবে বরাদ্দ আসে ৯০ হাজার টাকা। সে টাকা কমিটির লোকজন কোষাধ্যক্ষের কাছে রাখেন। তবে তিন মাসেও ফেরদৌস টাকা না দেওয়ায় কাজ শুরু হয়নি।
সবাই মিলে এ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিলে ফেরদৌসের বাবা ইয়াবালী নিজের উপহারের ঘরটি মাসুম নামে একজনের কাছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। এরপর ইয়াবালী ছেলের ঘরের বারান্দায় টিনের বেড়া দিয়ে বসবাস করছেন। উপহারের ঘরটি এখন মাসুমের দখলে।
রেজিস্ট্রি মূলে ঘর হস্তান্তরের দলিল না হলেও ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে দিয়েছেন এক মাস আগে। উপহারের ঘরটিতে আলু রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কালাইয়ে চার ধাপে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে গৃহ ও ভূমিহীন ১৭৮টি পরিবারের মাঝে জমিসহ ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। শুরু থেকেই এ ঘর প্রকৃত উপকারভোগীদের না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। কাঁটাহারে ৫৯ জন ঘর পেয়েছেন। তবে অনেকের নিজস্ব বাড়ি থাকায় তাঁরা আজও ঘরে ওঠেননি। সেগুলো অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এরই মধ্যে ঘর বিক্রির অভিযোগ সামনে এলো। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।
জানা গেছে, কালাই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের মাধ্যমে করা দলিলে কাঁটাহারের দুই শতাংশ জমিসহ ঘরের মালিক হন ইয়াবালী মণ্ডল। পাশে আরেকটি ঘর পান তার ছেলে ফেরদৌস।
ইয়াবালী মণ্ডলের ঘর বিক্রির বিষয়ে আরেক উপকারভোগী আব্দুস সামাদ বলেন, ইয়াবালীর ছেলে জুয়াড়ি ও মাদকাসক্ত। ছেলের দায় মেটাতেই ইয়াবালীকে ঘর বিক্রি করতে হয়েছে। তারা এ সাহস কোথায় পেলেন, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
এ বিষয়ে ইয়াবালী মণ্ডল বলেন, মসজিদের নামে বরাদ্দ পাওয়া সরকারি টাকা ছেলে খরচ করেছে। তিন মাসেও টাকা দিতে পারেনি। লোকজন টাকার জন্য চাপ দেয়। ছেলের জন্য বাধ্য হয়ে উপহারের ঘরটি বিক্রি করেছি। এখন স্বামী-স্ত্রী ছেলের ঘরের বারান্দায় বসবাস করছি।
ফেরদৌসের স্ত্রী শিল্পী বেগম বলেন, স্বামীর ঋণ পরিশোধ করতেই তার শ্বশুর উপহারের ঘরটি বিক্রি করেছেন। টাকা ফেরত দিয়ে ঘরটি নেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।
ফেরদৌস মণ্ডল বলেন, টাকার জন্যই বাবা ঘরটি বিক্রি করেছেন। প্রশাসনের লোকজন তাকে ও তার বাবাকে ডেকেছিলেন। টাকা ফেরত দিতে বলেছেন। টাকা হাতে পেলে ঘর নিয়ে নেবেন।
ঘরের ক্রেতা মাসুম বলেন, উপহারের ঘর বিক্রি করা যাবে না, তার জানা ছিল না। বিষয়টি নিয়ে এত হৈচৈ পড়বে তাও বুঝতে পারিনি। ইয়াবালী ও তার ছেলে ফেরদৌসকে টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। তবে তারা দেননি। টাকা দিলেই ঘর তাদের দিয়ে দেব।
ইউএনও জান্নাত আরা তিথি বলেন, মুজিব শতবর্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার কেউ বেচাকেনা করতে পারবেন না, যতই ঋণগ্রস্ত হোন না কেন। ঘর বিক্রির সত্যতা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রকৃত উপকারভোগীরা ঘর পেয়েছেন কি-না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাঁরা ঘরে ওঠেননি, তাদের বরাদ্দ বাতিলে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।